নিজেকে কি নিজের কাছে হঠাৎ করে ব্যার্থ মনে হচ্ছে ???....

 নিজেকে কি নিজের কাছে হঠাৎ করে ব্যার্থ মনে হচ্ছে ???....



 

' নিতু ইদানিং বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব চুপচাপ থাকে । যেনো কোনো বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন , অথচ সে একটা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে , সবাই জানে তার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। তার পরে নিতুর মনে অপ্রাপ্তি নামক শব্দটা কিছুদিন যাবৎ খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে । তার কাছে মনে হচ্ছে সে তো পৃথিবী বা পৃথিবীর মানুষগুলোর কাছে কিছুই না। তার ছোট্ট এই জীবনে এই ছোট্ট ছোট্ট কিছু প্রাপ্তি কি কোনো মূল্য কি রাখে। আর এই ধরনের চিন্তা নিতুকে খুব ভাবাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ। যা চঞ্চল নিতু কে ও করে দিয়েছে চুপচাপ। ' এটা কেবল একটা প্রতীকী গল্প ।


 কিন্তু এমন নিতু কি নেই আমাদের আশে পাশে ?   অবশ্যই ... এমন অনেক নিতু রয়েছে আমার আপনার আশে পাশে যারা নিজেদের নিয়ে হঠাৎ করেই একধরনের হতাশায় ডুবে যায় আর একটা প্রাণোচ্ছল জীবন নষ্ট হয়ে বিবর্ণময় হয়ে যায় । কিন্তু এটা হওয়া কি উচিৎ ?? _ কক্ষনো না ,, আমাদের সকলকে তাই সচেতন হতে হবে যেনো আমাদের জীবনে কোনদিন এইরকম অপ্রাপ্তি নামক শব্দটি স্থান না নিতে পারে । তার জন্যে নিজেদেরকেই পাশে দাঁড়াতে হবে নিজের। তার জন্যে আপনাদেরকে কয়েকটা বিষয় কে মনে গেথে নিতে হবে । 


১ . নিজের জীবনের প্রাপ্তির কথা গুলো ভাবুন, যখন মনে হবে অপ্রাপ্তি আসতে চাচ্ছে জীবনে : 


প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তাই জীবনে থাকবে কিছু প্রাপ্তি, থাকবে কিছু অপ্রাপ্তি । তাই যখনই অপ্রাপ্তি নামক শব্দটি আপনাদের মধ্যে তার বিষণ্ণতা নিয়ে ঢুকতে চাইবে তখনই আপনারা আপনাদের জীবনের প্রাপ্তির কথা গুলো ভাবুন , আপনাদের ছোট ছোট অর্জনের কথা ভাবুন, যেগুলো আপনাকে খুশি করেছিল কিংবা আপনার দ্বারা অন্য কাওকে খুশি করেছিল। যখন আপনি জীবন নিয়ে এইভাবে ভাবতে শুরু করবেন তখন আপনার অপ্রাপ্তি আপনার মধ্যে প্রভাব খাটাতে ব্যার্থ হবে।


২ . বাবা - মা এর কথা ভাবুন : 


আমি ,আপনি কিংবা এই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই জীবনের যেকোনো চড়াই কিংবা উতরাই তে স্বাভাবিকভাবে দুজন মানুষকে পাশে পাই । আর সেই দুজন মানুষ হলো আমাদের বাবা - মা । কাজেই যখন মনে হবে নিজের জীবন টা তুচ্ছ তখন ভাবুন আপনার যখন কিছুই ছিলো না তখন দুজন মানুষ আপনার সাথে ছিলো, আদর যত্ন দিয়ে বড়ো করেছে। তাহলে আপনার জীবন ব্যার্থ হয় কি করে। কারন ব্যার্থ মানুষের সাথে কেও থাকে না। যখন আপনি এইভাবে ভাবতে শুরু করবেন তখন জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাবেন। ব্যার্থ তা থেকে নিজেকে বের করতে পারবেন।


৩ . নিজেকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধুতে পরিণত করো : 


আমরা চলার পথে অনেক বন্ধু বানাই জীবনে। কিন্তু একবার ভাবুন তো যদি আপনি সত্যিই একজন ভালো বন্ধু বানাতে পারতেন তাহলে কি আজকে আপনি নিজেকে এই জায়গায় পেতেন ? নাহ.. তাহলে কি আপনে এখন এটা ভাবতে শুরু করে দিবেন, জীবনে করলাম টা কি ! একটা ভালো বন্ধু বানাতে পারলাম না !! 

এই চিন্তা আপনাকে আরও ব্যার্থতা অনুভব করাবে । তাই নিজেকে নিজের বন্ধু বানান। এতে দেখবেন আপনার ভালো সময়, কিংবা খারাপ সময় - আপনার পাশে কেও থাকুক বা না থাকুক নিজেকে নিজের পাশে পাবেন। আর আপনার পাশে থাকা ' আপনিটা ' কক্ষনো আপনাকে ধোঁকা দিবে না , আপনার সাথ কক্ষনো ছাড়বে না। আর আপনার খারাপ সময় গুলোতে আপনাকে একা অনুভব ও করতে হবে না। এতে আপনার জীবনে ব্যার্থতার অনুভূতি ও কমতে থাকবে।


৪. নিজের স্বপ্ন আর সেই স্বপ্নের গন্তব্য কে কল্পনা করুন : 


আপনি , আমি , আমরা সকলেই নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। নিজেকে সেই স্বপ্নের জায়গায় দেখতে চাই। কাজই যখন মনে হবে আপনি ব্যার্থ তখন আপনি আপনার স্বপ্নের কথা ভাবুন সেই স্বপ্ন পূরণ হলে নিজেকে কোথায় পাবেন সেটা ভাবুন। দেখবেন আপনার স্বপ্ন আপনাকে হাতছানি দিবে , আর দূর করতে সাহায্য করবে আপনার ব্যার্থতা কে। 


৫ . পরিবারের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটান : 


যখন আপনার জীবনে সব থাকার পরেও আপনাকে আপনার নিজের কাছে ব্যার্থ মনে হচ্ছে তখন আপনি আপনার পরিবারের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটাতে শুরু করুন দেখবেন আপনার জীবনে আপনি আপনার সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি পেয়ে যাবেন যার কাছে আপনার ব্যার্থতা সৃষ্টিকারী অপ্রাপ্তিগুলো কিছুই না। কারন একটা পরিবার আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড়ো অর্জন।


৬. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সময় কম ব্যায় করুন : 


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোকে কেবল যোগাযোগের জন্যেই ব্যাবহার করুণ , এখানে আপনি আপনার মূল্যবান সময় কম ব্যায় করুণ । কেননা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে মানুষ তার কিছু ভালো মুহূর্ত শেয়ার করে, হয়তো তার আড়ালে তার খারাপ মুহুর্ত গুলা রয়েই যায়। আর এইগুলা আপনার মধ্যে হতাশা আনতে পারে। তাই প্রয়োজন বেতিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে সময় কম কাটান।




আপনি যখন উপরের সবগুলো বিষয় আপনার মনে জায়গা দিবেন তখন আপনি নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে সফল মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করবেন। আপনার জীবনের যেই ব্যার্থতা নামক শব্দটি আপনার জীবনকে করে দিয়েছিল আনন্দহীন তখন সেই শব্দটি কেই আপনি আর খুঁজে পাবেন না। 



A . R . Paul 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

Post a Comment

0 Comments